খোশ আমদেদ মাহে রমজান
- আপলোড সময় : ০১-০৩-২০২৫ ০১:০২:১০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০১-০৩-২০২৫ ০১:০২:১০ পূর্বাহ্ন

মুফতি আবু দারদা
আসছে রহমতের মাস রমজান। অফুরান ফজিলতের এ মাসকে বরণ করতে আমরা কতটুকু প্রস্তুত? আল্লাহর রহমতের ঝর্ণাধারায় অবগাহন করে গুনাহ থেকে নিজেদের পবিত্র করার এ সুবর্ণ সুযোগ কিন্তু বছরে একবারই আসে। তাই আসুন, এ পবিত্র মাসকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই, এ মাসের মর্যাদা-ফজিলত উপলব্ধি করি এবং ইবাদত ও ভালো কাজের মাধ্যমে নিজেদের পরকালকে সমৃদ্ধ করি।
আল্লাহর অফুরান রহমত :
বিশ্বজগতে যত দয়া রয়েছে, তার কেবল ১ শতাংশ সৃষ্টিজগতকে দান করা হয়েছে, বাকি ৯৯ শতাংশই মহান আল্লাহ নিজের রহমতের ভা-ারে সংরক্ষণে রেখেছেন। তাই বান্দা যত বড় গুনাহগারই হোক না কেন, আল্লাহর দরবারে একটু বিনীত হলেই তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কোরআনে তিনি বারবার মানুষকে সুপথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এবং তাঁর অনন্ত রহমতের চাদরে ঢেকে নেওয়ার ওয়াদা করেছেন। পরম মমতায় বলেছেন, ‘হে আমার সেসব বান্দা, যারা কুফর-শিরক করে নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তিনিই একমাত্র ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা জুমার: ৫)
রমজানে রহমতের ধারা :
রমজান বছরের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মাস। এই মাসে আল্লাহর রহমতের ঝর্ণাধারা বয়ে যায়। গুনাহের জীবন ছেড়ে আনুগত্যের পবিত্র জীবন শুরু করতে চাইলে রমজানের এ রহমতের ঝর্ণাধারায় অবগাহন করার বিকল্প নেই। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান হাজির হয়েছে। রমজান এক বরকতময় মাস। আল্লাহ তোমাদের জন্য এ মাসে রোজা পালন করা ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ মাসে অবাধ্য শয়তানদের শিকলাবদ্ধ করা হয়। এ মাসে আল্লাহ এমন একটি রাত রেখেছেন, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত।’ (নাসায়ি: ২১০৬)
তওবা ও ক্ষমার অফুরান সুযোগ নিয়ে আসে রমজান। দিনের সিয়াম সাধনা এবং রাত জেগে নামাজ আদায় এই মাসের প্রধান ইবাদত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও নেকির আশায় রমজান মাসের রোজা রাখে (এবং রাতে) দ-ায়মান হয় (সালাত আদায় করতে), তার আগের গুনাহসমূহ মাফ করা হয়।’ (বুখারি: ৩৮)
রোজাদার আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় বান্দা। তাঁর যেকোনো দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। মজলুমের দোয়া, রোজাদারের দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া।’ (বায়হাকি: ৬৩৯২)
তাকওয়া অর্জনের সেরা সময় :
রোজা তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। আল্লাহর ভয় চর্চা করার জন্যই এই মাসটি দিয়েছেন তিনি। রোজাদার ব্যক্তি দিনের শুরু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার ও যৌনাকাক্সক্ষা থেকে বিরত থাকেন, তা কেন? একমাত্র আল্লাহর ভয় ও তাঁর আদেশ পালনার্থেই। পরকালে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের মানসেই রোজাদার এক মাসের সংযমচর্চায় ব্রতী হন। এটিই রোজাদারের জীবনে রমজানের শ্রেষ্ঠ অর্জন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য ফরজ করা হয়েছিল; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৪)
পরকালীন মুক্তির সোপান :
রোজা কিয়ামতের দিন রোজাদারের পক্ষে সুপারিশ করবে। হাদিসে এসেছে, কিয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘হে আমার রব, আমি তাকে দিনে খানাপিনা ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত রেখেছি। আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ কোরআন বলবে, ‘হে আমার রব, আমি তাকে রাতে ঘুমোতে দিইনি। আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন।’ রোজা ও কোরআন উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ: ৬৬২৬)
এভাবেই রোজার কারণে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি দেবেন মহান আল্লাহ তাআলা। তাই রোজাকে বলা হয় মুমিনের পরকালীন মুক্তির সোপান। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে এক দিনও রোজা পালন করে, আল্লাহ তার মুখম-লকে জাহান্নামের আগুন থেকে ৭০ বছরের দূরত্বে সরিয়ে নেন।’ (বুখারি: ২৮৪০)
রোজাদারের প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্টি :
রোজাদারদের প্রতি আল্লাহ এতই সন্তুষ্ট হন যে কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে একটি বিশেষ দরজা রয়েছে, যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন রোজাদারগণই শুধু ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া অন্য কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদারেরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে এবং ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যখন তাদের প্রবেশ শেষ হবে, তখন দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে।...’ (বুখারি: ১৭৯৭)
শুধু কি তা-ই, রোজাদারকে আল্লাহ তাআলা নিজেই পুরস্কৃত করবেন। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলার ভাষ্যে এসেছে, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই - রোজা ছাড়া। এটা আমার জন্য, আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। আর রোজাদারদের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের ঘ্রাণের চেয়ে বেশি সুগন্ধযুক্ত।’ (বুখারি: ৫৯২৭)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কারণ, রোজা শুধু আমার জন্যই, আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম: ১৫৫১)
লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ